
নিউজ ডেস্ক:: মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর উপর রোহিঙ্গা চরমপন্থী গ্রুপ আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি আরসার কথিত অতর্কিত হামলার ঘটনা নিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে চলছে নানা আলোচনা। এ ঘটনার পর বাংলাদেশ সীমান্ত জুড়ে মিয়ানমার সেনা তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। অন্যদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ–বিজিবি সদস্যরা সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এদিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিভিন্ন এনজিওর কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণের দাবিতে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে।
ইরাবর্তী অনলাইন গতকাল মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ্যা তায়ের উদ্বৃতি দিয়ে জানিয়েছে, মিয়ানমার তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে কোন ধরনের সন্ত্রাসী গোষ্ঠির সাথে সমম্বয় করবে না। নিরাপত্তা বাহিনী চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নিবে। শুক্রবার যারা নিরাপত্তা বাহিনীর উপর আক্রমন করেছে তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব সন্ত্রাসীদের অবশ্যই নির্মূল করা হবে। গত শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে রাখাইনের মংডুর তুমব্রু থেকে প্রায় ৮কিলোমিটার দক্ষিণে আরাকানিজ গ্রাম কিয়াং চং এলাকায় মংডু সড়কের উপর সেনাবাহিনী সদস্য বহনকারী একটি গাড়িতে ২০ জনের মত সন্ত্রাসী পাহাড় থেকে অতর্কিত আক্রমন চালায়। এতে ৬ জন সেনা সদস্য ও একজন বেসামারিক গাড়ি চালক আহত হয়। আহতদের মংডুর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার দায় স্বীকার করেছে রোহিঙ্গা চরমপন্থি গোষ্ঠী আরসা। বাংলাদেশ সীমান্তে কাটা তারের ঘেরা সংস্কার কাজ শেষে মিয়ানমার মিলিটারী ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটলিয়ানের সেনা সদস্যরা ফেরার পথে আক্রান্তের শিকার হয় বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমার সেনাবাহিনী তৎপরতা ও টহল জোরদার করেছে বলে সীমান্ত এলাকা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে।
উখিয়ার পালংখালী থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির বাঁইশ ফাড়ি পর্যন্ত সীমান্ত নিরাপত্তায় নিয়োজিত কক্সবাজার–৩৪ বিজিবি ব্যাটলিয়ানের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর ইকবাল বলেন, স্বভাবতই কোন দেশের অভ্যন্তরের যে কোন ধরনের নিরাপত্তা জনিত ঘটনা ঘটলে সে দেশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। সে অনুযায়ী মিয়ানমার অংশে ২৫ আগস্ট থেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। তা ছাড়া শুক্রবারের ঘটনার পর থেকে সীমান্তে যে স্বাভাবিকতা ছিল তা কিছু বাড়িয়েছে। বিজিবি সদস্যরাও বাংলাদেশ অংশের সীমান্ত নিরাপত্তা বিধা সতর্কতা বৃদ্ধি করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও বিজিবি কারও কোন ধরনের অহেতুক উস্কানিতে পা দেবে না। যা করা হবে তা ভেবে চিন্তে সম্মিলিতভাবে করা হবে।
ইয়াঙ্গুন ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মং মং সুয়ে এর উদ্বৃতি দিয়ে ইরাবতী অনলাইন জানিয়েছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার উদ্বাস্তু প্রত্যাবাসনের যে অগ্রগতি তার ভণ্ডুল করতে করতে আরসা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। সরকারের মুখপাত্র জ্যা তায়ে বলেছেন, শুক্রবার সেনা সদস্যদের উপর হামলাকারীরা চিহ্নিত। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে রাখাইন অধিবাসীদের ফিরিয়ে আনার যে প্রক্রিয়া তা যদি কোনভাবে ব্যাহত হয় তার দায় দায়িত্ব উক্ত সন্ত্রাসীদের বহন করতে হবে।
উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ একান্ত মানবিক কারণে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও তৎমধ্যে একটি মহল রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফেরত না যাওয়ার ব্যাপারে উস্কানি দিচ্ছে। উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোতে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সেবা সংস্থাগুলো বাংলাদেশ সরকারের স্বার্থ বিরোধী এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর সাথে সম্পাদিত চুক্তি লংঘন করে প্রায় তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে চাকরিতে নিয়োজিত করেছে। খবর পাওয়া যাচ্ছে চাকরিজীবী এসব রোহিঙ্গা তাদের বেতনের একটি অংশ বিতর্কিত খাতে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বিরোধী ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিরোধী ষড়যন্ত্রকারী ও উস্কানি দাতাদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত রোহিঙ্গা সমস্যা সহজে সমাধান করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি।সুুত্র: আজাদী
পাঠকের মতামত